ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ট্রেডিং (স্পট, ফিউচার ও মার্জিন) কি হালাল নাকি হারাম? A-Z জেনে নিন পোস্টে।

আসসালামুআলাইকুম। আশা করি সকলে ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কথা না বাড়িয়ে পোস্টের টপিকে চলে যাই।

প্রথমেই স্বীকার করতে চাই, ধর্ম খুবই সেনসিটিভ বিষয় ও সেই ধর্ম নিয়ে ব্যাখা/বিশ্লেষণ আমার মতো সাধারণ মানুষের করা খুব কঠিন। এই পোস্টে শুধুমাত্র আমার ব্যাক্তিগত ফাইন্ড আউট ও সোর্স সহকারে সকলকে জানানোই উদ্দেশ্য। চেষ্টা করবো যত সহজ ভাষায় ও সংক্ষেপে পোস্ট করার।

তো আমাদের আজকের টপিক হচ্ছে – ক্রিপ্টো/ মার্জিন / ফিউচার ট্রেড হালাল নাকি হারাম? হালাল বা হারামের ক্রাইটেরিয়া কি কি? ও সেইসাথে আরো কিছু প্রশ্নের জবাব।

এইসব জানার আগে ইসলামিক পরিভাষায় টাকা/মুদ্রা/কারেন্সি কি সেটা আমাদের জানতে হবে।

What is money from Islamic POV?

– টাকা হচ্ছে শুধুমাত্র একটি পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম ইসলামিক ভাষায়। এটির হালাল বা হারামের সাথে ডিরেক্ট কোন সম্পর্কে নেই। তবে টাকার সোর্স বা ব্যবহার ভেদে হালাল/হারাম হতে পারে।

প্রত্যেকটা ক্রিপ্টো ও কিন্তু একেকটা ডিজিটাল কারেন্সি যা পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম। তাই ক্রিপ্টো কারেন্সি in general হালাল বলা যায়।

কিন্তু কিন্তু কিন্তু – অনেকেই ( সাধারণ মানুষ / আলেম/ বিশেষজ্ঞরা) ক্রিপ্টোকারেন্সি কে হারাম বলে থাকে৷ তারা এক্ষেত্রে ২টি রিসন সাধারণত দ্বার করায় ক্রিপ্টোকারেন্সিকে হারাম হিসেবে ব্যাখা করতে। সেই ২টি কারন হলো-

১. ক্রিপ্টো কারেন্সি এর ইকোনমিক ভ্যালু নেই। তাই সেটি হারাম।

২. ক্রিপ্টো কারেন্সি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ড্রাগ, জুয়া ও হারাম কাজে ব্যবহৃত হয় তাই সেটি হারাম।

চিন্তা নেই ২টি প্রশ্নেরই লজিক্যাল উত্তর আমি দিয়ে দিচ্ছি –

১. আসলে অনেক ইসলামিক পন্ডিত এটা বলে থাকে যে ক্রিপ্টো এর কোন ইকোনমিক ভ্যালু নেই সেই জন্য সেটি হারাম। যা একদমই সত্য নয়। ক্রিপ্টো এর ইকোনমিক ভ্যালু আছে।

ইকোনমিক ভ্যালু নির্ভর করে কোন প্রজেক্ট,ব্যাক্তি বা জিনিসের সার্ভিস বা ক্রিপ্টো এর ভাষায় ইউজকেসের উপর। সহজ ভাষায় আপনি যদি কোন সার্ভিজ দিয়ে থাকেন ও সেটা পেতে মানুষ টাকা দিতে রাজি হয় তাহলে সেটার ইকোনমিক ভ্যালু আছে।

ক্রিপ্টো তে এরকম হাজার হাজার প্রজেক্ট আছে যেগুলার ইউজকেস কার্যকরী ও মানুষ কারেন্সি কিনে সেই সার্ভিস ব্যবহারের জন্য। তাই অবশ্যই ক্রিপ্টো কারেন্সি এর ইকোনমিক ভ্যালু আছে।

২. এটাও আরেকটা ফলস ন্যারেটিভ কারন বর্তমানে ক্রিপ্টো জুয়া বা ইলিগ্যাল কাজের থেকে অন্যান্য কাজে বেশি ইউজ হয়। মানছি এক সময়, ৯০% ইলিগ্যাল কাজে ব্যবহার হতো তবে এখন ভিন্ন। ইন্টারনেট ঘাটলে এটাই সবচেয়ে বেশি ফতুয়া হিসেবে পাবেন। আদৌ ওইসব পন্ডিত ও স্কলাররা খুব একটা আইডিয়া নেয় না। তারা ইন্টারনেট ঘেটে ক্রিপ্টো এর ইউজকেস সম্পর্কে যতটুকু পায় সেটার উপর নির্ভর করেই কমেন্ট করে। তাই জুয়া ও ইলিগ্যাল কর্মের জন্য ক্রিপ্টো ইলিগ্যাল বলে।

তো আশা করি এটা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, “টাকা ইসলামিক পরিভাষায় শুধুমাত্র একটা পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম যার নিজস্ব কোন মূল্য নেই ও যেহেতু ক্রিপ্টো কারেন্সি ও একধরনের টাকা তাই as টাকা সেটিও হালাল। তবে ব্যবহার ও সোর্স ভেদে কোন ক্রিপ্টো হালাল ও হারাম হতে পারে।”

এখন প্রশ্ন হতে পারে, “উপরের কমেন্টের মাধ্যমে বুঝলাম ক্রিপ্টো পণ্য আদান-প্রদানের এর জন্য হালাল ( payment method) কিন্ত ট্রেডিং কি হালাল?”

তার জবার জানার আগে আমাদের ভাবতে হবে ট্রেডিং এ আমরা কি করি? একটা কারেন্সি টু আরেকটা কারেন্সি এর বিপক্ষে সেল বা বায় করি। আর আমাদের প্রফিট আশে যখন আমাদের কেনা কয়েনটা যে কয়েনের against এ ট্রেড করতেসি সেই কয়েনের বিপক্ষে প্রাইস বাড়ে। আর প্রাইস বাড়া মানে ডিভ্যালুয়েশন বা মূল্যস্ফীতি ওই বিপক্ষ কারেন্সি এর বিপরীতে।

ইসলাম অনূযায়ী buyer or seller এই ইনফ্লেশনের জন্য দায়ী না। তাই সেটা হারামে পরেনা। এছাড়া আল্লাহ ক্রয়- বিক্রয় হালাল করেছেন।

সব ধরনের ( Spot, future, margin, options) ট্রেডিং ই হালাল?

নাহ, সব ধরনের ট্রেড হালাল না। এক জিনিষ সব ধরনের ট্রেডের মধ্যে হালাল-হারামের ডিফারেন্স তৈরি করে দেয়। যা হচ্ছে, “রিবা”।

রিবা কি?
রিবা আরবি শব্দ যার বাংলা হচ্ছে, সুদ বা ইংরেজিতে ইন্টারেস্ট। কোন জিনিষের অরিজিনাল প্রাইসের সাথে কিছু ” যুক্ত বা বাড়ানো কে রিবা হিসেবে ধরা হয়।

রিবা দুই প্রকার –
১. রিবা আল-নাসিয়াহ
২. রিবা আল-ফাদেল

রিবা আল-নাসিয়াহ হচ্ছে এমন কোন লোন যেটাতে রিপেমেন্ট এর নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ থাকে ও অরিজিনাল লোনের সাথে আরো এমাউন্ট যুক্ত হয় – স্কলারদের মতে।

রিবা আল-ফাদেল হচ্ছে এমন সুদ যেটা একই জিনিষ লোন ফেরতের সময় বেশি দিলে হয়। যেমনঃ টাকা কাউকে ধার দিয়ে সুদসহ ফেরত নেয়া। – স্কলারদের মতে।

ফিউচার ও মার্জিন ট্রেডে আমরা রিবা আল-নাসিয়াহ দেখতে পাই। সেখানে আমরা প্রথমত লোন নেই ও সেই লোন নেয়ার কারনে আমাদের একটা এক্সট্রা এমাউন্ট ইন্টারেস্ট হিসেবে দিতে হয়। যার কারনে সেটা হারাম হয়ে যায়।

তবে এইখানে আরেকটি জিনিস অনেকের প্রশ্ন হতে পারে যে আমি (x = leverage) নিলে নাহয় হারাম হবে যদি না নিয়ে শুধু 1X ( initial fund) দিয়ে ফিউচার ট্রেড করি তাহলে সেটা কি হারাম হবে?

ফিউচার ট্রেডে দুই ধরনের ফি দেয়া লাগে। একটা লেভারেজ এর আর একটা হচ্ছে মার্কেট ফান্ডিং রেট। এই ফান্ডিং রেট এমাউন্ট দেয়া হয় মূলত ফিউচার মার্কেট প্রাইস স্পটের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ও স্প্রেড কমাতে। এটা মার্কেটে দেয়া হচ্ছে, স্টিল এক্সট্রা যুক্ত হচ্ছে এইখানে তাই হারামে পরার কথা। তবে এই বিষয়ে কোন ফতুয়া পেলাম না।

শেষ প্রশ্ন যেটার উত্তর আমি দিতে চাই যে, এমন পসিবিলিটি কি আছে যে ভবিষ্যতে ফিউচার বা মার্জিন ট্রেড হালাল হবে?

অবশ্যই আছে। এইখানে ফরেক্স মার্কেট টেনে আনতে চাই। ফরেক্স এ বর্তমানে হালাল ভাবে লেভারেজ নিয়ে ট্রেড করা সম্ভব। কিছু ব্রোকার সেটা সাপোর্ট করে। কিন্তু কিভাবে করে তারা?

তারা মূলত লেভারেজ এর জন্য কোন ফি নেয় না। তারা সাবস্ক্রিপশন ফি রাখে। অর্থাৎ আপনি যদি মুসলিম ও হালাল ভাবে ট্রেডিং করতে চান তাহলে তাদের সার্ভিস একটা এমাউন্ট দিয়ে কিনে নিতে পারবেন। তার পরিবর্তে তারা আপনার লিভারেজে কোন ইন্টারেস্ট নিবে না। আর স্প্রেড নিজেদের থেকে পে করবে। যখন ইন্টারেস্ট বা কোনকিছু এক্সট্রা নিবেনা তখন সেটা সুদের পরিবর্তে ধার হয়ে যায়। তখন সেটা হালাল।

তো সাবস্কিপশন ফি টা হারাম না?
নাহ, Broker এর প্ল্যাটফর্ম টা হচ্ছে একধরনের সার্ভিস। আর সার্ভিসের বিপরীতে টাকা উপার্জন হালাল।

তো ভবিষ্যতে এক্সচেঞ্জ গুলা চাইলেই এই নিয়ম মেনে ফিউচার বা মার্জিন ট্রেডিং হালাল করে দিতে পারে আমাদের জন্য।

তো আমরা যদি পোস্টের শেষে একটু recap করি –

* Crypto in General Halal (হারাম কাজে ব্যবহার করলে হারাম)।

* স্পষ্ট ট্রেডিং হালাল কারন আল্লাহ ক্রয়/বিক্রয় হালাল করেছেন।

* মার্জিন ট্রেড/ ফিউচার ট্রেড হারাম কারন রিবা আল নাসিয়াহ সেখানে এপ্লাই হয়।

* ফিউচার ট্রেড / মার্জিন ট্রেড ভবিষ্যতে হালাল হতে পারে।

কিছু রেফারেন্স লিংক –

Riba interest article

Halal forex trading article

[NOTE – এটি একটি শিক্ষনীয় speculative post. এই পোস্টের মাধ্যমে Author এর ব্যাক্তিভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ ইনভেস্টমেন্ট advice/ influence, crypto promotion হিসেবে নিলে তার দায়ভার Author বা ট্রিকবিডি টিম এর নয়।]

কারো কোন দ্বিমত,ভুল বা ব্যাখা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করুন। আমি অবশ্যই সেটার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

এছাড়া চাইলে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করতে পারেন যেখানে আমরা Educational content পোস্ট করে থাকি।

Trade at Your Own Risk

The post ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ট্রেডিং (স্পট, ফিউচার ও মার্জিন) কি হালাল নাকি হারাম? A-Z জেনে নিন পোস্টে। appeared first on Trickbd.com.

 ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ট্রেডিং (স্পট, ফিউচার ও মার্জিন) কি হালাল নাকি হারাম? A-Z জেনে নিন পোস্টে।

Marzuk Neil

জানতে চাই এবং অন্যকে জানাতে চাই✨ তাই বাংলা টেকনোলজি বিষয়ক এই ব্লগটি খোলা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form